অংশীদারি ব্যবসায়

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

ব্যবসায় পরিবারের দ্বিতীয় সদস্য হলো অংশীদারি সংগঠন। একমালিকানা ব্যবসায়ে একক মালিকের পুঁজি ও সামর্থের সীমাবদ্ধতার কারণে এক পর্যায়ে বড় ধরনের সংগঠনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ফলশ্রুতিতে একাধিক ব্যক্তির মালিকানা ও তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি হয় অংশীদারি সংগঠন। এ ব্যবসায়ে ন্যূনতম ২ জন এবং সর্বাধিক ২০ জন সদস্য থাকে। তবে ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ১০ জন সদস্য থাকে। ১৯৩২ সালের ভারতীয় অংশীদারি আইন অনুযায়ী, “সকল ব্যক্তির দ্বারা বা সকলের পক্ষে একজন দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে কতিপয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কই হলো অংশীদারি ব্যবসায়। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনটি প্রচলিত রয়েছে।


এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা জানতে পারব—

  • অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ।
  • অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন প্রণালি ।
  • অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা/অসুবিধা ।
  • অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ।
  • অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিপত্রের নমুনা ও বিষয়বস্তু ।
  • অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন পদ্ধতি এবং নিবন্ধন না করার পরিণাম ।
  • অংশীদারদের ধরন।
  • অংশীদারদের যোগ্যতা ।
  • অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন প্রক্রিয়া ।
  • বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থা ।

সূত্র: ক্যামব্রিয়ান পাবলিকেশন্স

Content added || updated By

অংশীদারি ব্যবসায়ের ধারণা

অংশীদারি ব্যবসায় একটি প্রাচীন ধরনের সংগঠন। শুরুতে একক মালিকানার ভিত্তিতে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও এক পর্যায়ে এসে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রয়োজনেই একাধিক ব্যক্তি সামর্থ্যের সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়ে। জন্ম নেয় অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠনের। সহজ অর্থে একের অধিক ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে অংশীদারিত্ব বা শরিকানার ভিত্তিতে যে ব্যবসায় গঠন করে তাকে অংশদিারি ব্যবসায় বলে। ব্যাপক অর্থে কমপক্ষে দুজন এবং সর্বোচ্চ বিশজন (ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দশজন) ব্যক্তি মুনাফা অজন ও তা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে চুক্তিবদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলা হয়ে থাকে । ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪নং ধারায় বলা হয়েছে-“সকলের দ্বারা অথবা সকলের পক্ষে যেকোনো একজনের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করার উদ্দেশ্যে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয়, তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।”

Content added By
অংশীদারী ব্যবসায়ে মালিকের সংখ্যা যত ইচ্ছা তত হতে পারে।
অংশীদারী ব্যবসায়ে মালিকের সংখ্যা নূন্যতম একজন
অংশীদারী ব্যবসায়ে মালিকের সংখ্যা সব্বোচ ২০ জন হতে পরে
অংশীদারী ব্যবসায়ে মালিকের সংখ্যা বীমা ব্যবসায়ে ১০ জন হতে পারে

অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য

অংশীদারি ব্যবসায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সম্মিলিত চুক্তির মাধ্যমে গঠিত একটি ব্যবসায় সংগঠন। মালিকানা গঠন ও পরিচালনাগত বিভিন্ন দিক থেকে অংশীদারি ব্যবসায় কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যা এ ব্যবসায়কে অন্যান্য ব্যবসায় থেকে আলাদা করেছে। নিম্নে অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. অংশীদারের সংখ্যা (Number of partners): বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুসারে কমপক্ষে দুজন এবং সাধারণ ব্যবসায়ে ২০ জনের অনধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে এ ব্যবসায় গঠিত হয়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ১০ জনের অধিক হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যেক সদস্যের জন্য এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে ।

২. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক (Contractual relation): চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। চুক্তির মাধ্যমেই অংশীদারি ব্যবসায়ের সৃষ্টি হয়। জন্মগত বা সামাজিক অধিকার বলে নয়। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তিতে আবদ্ধ হলেই অংশীদারদের চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩. সহজ গঠন প্রণালি (Easy formation): অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠন যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের মতো তত জটিল নয়। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি (কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ে ২০ জনের অধিক নয়, এবং ব্যাংকিং ব্যবসায়ে ১০ জনের অধিক নয়) একত্রে মিলিত হয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ ব্যবসায় গঠন করতে পারবে। ব্যবসায়ের উক্ত চুক্তি মৌখিক বা লিখিত উভয়ই হতে পারে। উক্ত চুক্তি নিবন্ধন বা অনিবন্ধনকৃত হতে পারে। তবে চুক্তির উদ্দেশ্য অবশ্যই আইনসম্মত হতে হবে।

৪. মূলধন (Capital): ব্যবসায়ের মূলধন অংশীদারগণ যোগান দেয়। কে কতটুকু মূলধন যোগান দিবে তা তাদের নিজেদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির উপর নির্ভর করে। এ বিষয়ে কোনো চুক্তি না থাকলে তারা সমানভাবে মূলধন যোগায়। প্রসঙ্গক্রমে উলেখ করা প্রয়োজন যে, কোনো মূলধন না দিয়ে অংশীদার হতে পারে এবং মুনাফা বণ্টনে অংশগ্রহণ করতে পারে।

৫. দায়-দায়িত্ব (Liabilities): অংশীদারি ব্যবসায়ের দেনার জন্য প্রত্যেক অংশীদার ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে দায়ী থাকে। অর্থাৎ ব্যবসায়ে লোকসান হলে লোকসানের ভাগ তাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে ভাগ করে দেয়া হয়। লোকসানের ভাগ শুধু একজনের পক্ষে বহন করা সম্ভব হলে এবং অন্য সদস্যদের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব না হলে বিত্তশালী একজনকে সকল লোকসানের ঝুঁকি বহন করতে হয় । সংক্ষেপে বলা যায়, অংশীদারের দায় সীমাহীন এবং তারা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে কারবারের দেনার জন্য দায়ী থাকে ৷

৬. লভ্যাংশ বণ্টন (Profit sharing): কোনো অংশীদার কত লভ্যাংশ পাবে তা তাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির উপর নির্ভর করে । চুক্তিতে মুনাফা বণ্টনের উলেখ না থাকলে বাংলাদেশের অংশীদারি আইন অনুসারে প্রত্যেক অংশীদার সমান অনুপাতে মুনাফা ভোগ করার অধিকারী ।

৭. পরস্পরের প্রতি পরস্পরের আস্থা ও বিশ্বাস (Mutual trust and confidence): অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক সদ্বিশ্বাস ও আস্থা অংশীদারি কারবারের একটি বৈশিষ্ট্য। একে অপরের প্রতি বিশ্বাসের উপর অংশীদারি ব্যবসায়ের অস্তিত্ব নির্ভর করে। অনেক সময় এক বা একাধিক অংশীদারের পক্ষে হয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করে। সে ক্ষেত্রে অংশীদারগণ উক্ত ব্যক্তির প্রতি আস্থাবান না হলে ব্যবসায় চলতে পারে না। একজন অংশীদার তাহার কার্য দ্বারা প্রত্যেক অংশীদারকে সমভাবে আবদ্ধ করে এবং ব্যবসায় কোনো লোকসান দেখা দিলে তা সমভাবে বা চুক্তি মোতাবেক সকল অংশীদারকে বহন করতে হয়।

৮. নিবন্ধন (Registration): অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। এটি নিবন্ধিত হতে পারে নাও হতে পারে। তবে ভবিষ্যৎ বিবাদ এড়ানোর জন্য নিবন্ধন করা ভালো। এটি ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

৯. সত্তা (Entity): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হতে এর পৃথক কোনো সত্তা নাই । অংশীদারগণের ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের সত্তা নেই যৌথ-মূলধনী কোম্পানির ন্যায় ফার্ম (Firm) বা প্রতিষ্ঠান নিজ নামে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে না। এ কারণে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য হতে পারে না বা অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে অংশীদারি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে না ।

১০. অংশীদারদের যোগ্যতা (Capacity of partners): দেশের প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোনো নাগরিক অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য হতে পারে। তবে পাগল, নাবালক, দেউলিয়া প্রভৃতি ব্যক্তি চুক্তি সম্পাদনের অনুপযুক্ত বিধায় অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য হতে পারে না।

পরিশেষে বলা যায় যে, উলেখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ অংশীদারি সংগঠনকে স্বকীয়তা দানের মাধ্যমে উপযোগী ক্ষেত্রে সফলতার সাথে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সহায়তা করছে।

Content added By

অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন পদ্ধতি

অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করা সহজ। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মূলধন সরবরাহ করে এ ব্যবসায় গঠন করতে পারে। আমাদের দেশে ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী এ ব্যবসায় গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করতে হলে নিলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

চিত্র : অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন পদ্ধতি

১। একত্রিত হওয়া (Being united): প্রথমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উদ্যোক্তা বা সদস্য ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে একত্রিত হবেন। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের বিধান অনুসারে সর্বনি সদস্য সংখ্যা ২ জন এবং সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা সাধারণ ক্ষেত্রে ২০ জন এবং ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ১০ জন।

২। চুক্তিপত্র সম্পাদন (Sign contract): অংশীদারি ব্যবসায় সম্পর্কিত বিষয় যেমন-মূলধনের পরিমাণ, লাভ লোকসান বণ্টন, পারস্পরিক অধিকার ইত্যাদি উল্লেখ করে সদস্যদের মধ্যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে হয় । তবে চুক্তিপত্র ছাড়া মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতেও অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত হতে পারে ।

৩। চুক্তিপত্র নিবন্ধন (Register contract): এ পর্যায়ে অংশীদারদের দ্বারা সম্পাদিত চুক্তিপত্র সরকার নির্ধারিত নিবন্ধকের অফিসে নিবন্ধন করাতে হয়। অবশ্য আইনে চুক্তিপত্রের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। অর্থাৎ এর নিবন্ধন না করলেও চলে ।

৪। ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ (Collecting trade licence): ব্যবসায় শুরু করার জন্য এ পর্যায়ে স্থানীয় পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত অফিস থেকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় । অবশ্য পৌর এলাকার বাইরে এ ধরনের ট্রেড লাইসেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় ।

৫। অন্যান্য সরকারি দপ্তরের অনুমতি (Permission from other Govt. authority): এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের প্রকৃতি অনুসারে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয় । যেমন—রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির জন্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং ট্রাভেল এজেন্সির ক্ষেত্রে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন।

৬। ব্যবসায় শুরু (Start Business) : উপরিউক্ত আনুষ্ঠানিকতাসমূহ সফলভাবে সমাপ্ত হলে অংশীদারগণ মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসায়িক কর্মকান্ড শুরু করেন। 

পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে বর্ণিত আনুষ্ঠানিকতাসমূহ ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করে একটি অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠন গঠিত হতে পারে। তবে সব ধরনের অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উল্লিখিত সকল আনুষ্ঠানিকতা পালন করার প্রয়োজন নাও হতে পারে।

Content added || updated By

অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ

একাধিক ব্যক্তি চুক্তির মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের জন্য যে ব্যবসায় গড়ে তোলে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা কয়েক ধরনের অংশীদারি ব্যবসায় দেখি। নিম্নে ব্যবসায়ের প্রকৃতি ও অংশীদারদের দায়-দায়িত্বের ভিত্তিতে এ ব্যবসায়কে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা—

চিত্র: অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ

১। সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায় (General partnership business): যে অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারদের দায় অসীম এবং অংশীদারগণ একক ও যৌথভাবে দেনা পরিশোধের জন্য দায়ী থাকে তাকে সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায় বলে। এ ধরনের অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় সকল অংশীদারের সমান অধিকার থাকে। সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায় সকলের দ্বারা অথবা সকলের পক্ষে এক বা একাধিক অংশীদারের দ্বারা পরিচালিত। বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায় বলতে সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়কে বুঝায়। বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয় । এরূপ ব্যবসায় দু'ধরনের হতে পারে। 

ক. ঐচ্ছিক অংশীদারি ব্যবসায় (Partnership at will):
১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুসারে কোনো অংশীদারি চুক্তিপত্রে অংশীদারগণ ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব বা সীমানা নির্ধারণ না করলে তাকে ঐচ্ছিক অংশীদারি ব্যবসায় বলে।

আইন অনুসারে এ ব্যবসায় নিম্নোক্তভাবে গঠিত হতে পারে—
i. অনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ব্যবসায় গঠিত হলে;
ii. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের পরও ব্যবসায় চালু থাকলে; 

iii. নির্দিষ্ট সময়ের পরও ব্যবসায় চালু থাকলে;

খ. নির্দিষ্ট অংশীদারি ব্যবসায় (Particular partnership): অংশীদারি আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে একত্রে কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ বা প্রচেষ্টার জন্য অংশীদারি হিসেবে গণ্য হতে পারে। একেই নির্দিষ্ট বা বিশেষ অংশীদারি ব্যবসায় বলে ।
এরূপ ব্যবসায় দুধরনের হতে পারে—

i. নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত অংশীদারি ব্যবসায় (Specific term partnership): একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গঠিত অংশীদারি ব্যবসায়কে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত অংশীদারি ব্যবসায় বলে। এ নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম হওয়ার সাথে সাথে এরূপ অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলুপ্তি ঘটে। তবে অংশীদারগণের সম্মতিতে এ ধরনের ব্যবসায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চালু থাকতে পারে।

ii. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রতিষ্ঠিত অংশীদারি ব্যবসায় (Specific Job partnership): বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করা হলে তাকে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য স্থাপিত অংশীদারি ব্যবসায় বলা হয়। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জিত হলে এর বিলুপ্তি ঘটে। অবশ্য সকল অংশীদার একমত হলে এরপরও চালাতে পারে।

২। সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায় (Limited partnership): এক বা একাধিক অংশীদারের সীমিত পরিমাণ দায়-দায়িত্ব নিয়ে যে অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত হয় তাকে সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায় বলে । অর্থাৎ যদি কোনো অংশীদারের দায় অসীম না থাকে বা কোনো এক বা একাধিক সদস্যের দায় চুক্তি অনুযায়ী বা আইনগত কারণে সীমাবদ্ধ থাকে তাকে সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায় বলে ।

এ ব্যবসায় দু'ধরনের অংশীদার থাকে । যথা—
i. সাধারণ অংশীদার, যাদের দায় অসীম থাকে ।
ii. সীমিত অংশীদার, যাদের দায় সীমাবদ্ধ থাকে। 

পরিশেষে বলা যায় যে, দেশে যেসব অংশীদারি ব্যবসায় চালু আছে তার মধ্যে সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায় বেশি। তবে এর পাশাপাশি সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায়েরও অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।

Content added By

অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিপত্র

অংশীদারি ব্যবসায় পরস্পর চুক্তির ভিত্তিতে গঠিত হয়। চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার প্রাক্কালে অংশীদারি সংগঠন গঠনেচ্ছু ব্যক্তিগণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবসায় সংগঠন ও পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি নির্ধারণ করে এবং তাদের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত বিষয়াদি লিখিতভাবে একটি দলিলে সন্নিবেশিত করে। উক্ত দলিলকেই অংশীদারি চুক্তিপত্র বলে ।

বাংলাদেশে বহাল ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৫ ধারা মতে, ”অংশীদারির সম্পর্ক চুক্তি হতে জন্ম লাভ করে; সামাজিক মর্যাদা বলে নয়।” (The relation of partnership arises from contract and not from status")

চিত্র: অংশীদারি চুক্তিপত্র

পরিশেষে বলা যায় যে, কারবার পরিচালনার সুবিধাজনক এবং বিলোপসাধন সংক্রান্ত শর্তাবলি সংবলিত লিখিত অংশীদারি চুক্তিকে অংশীদারি চুক্তিপত্র বা দলিল বলে।
“চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের ভিত্তি”-ব্যাখা কর ৷ Contract is the Essence of Partnership"-Explain.

অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হলো চুক্তি । অর্থাৎ চুক্তির মাধ্যমে একটি অংশীদারি ব্যবসায় জন্মলাভ করে এবং চুক্তি হতে উদ্ভূত সম্পর্ক দ্বারা অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালিত হয় । অংশীদারগণের পারস্পরিক সম্পর্কও নির্ধারিত হয়
চুক্তির মাধ্যমে।

অংশীদারি আইনের ৫ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, “অংশীদারির সম্পর্ক চুক্তি হতে জন্ম লাভ করে, আত্মীয়তা বা সামাজিক অধিকার বলে নয়।” (Partnership relation arises from the contract and not from status.")

সাধারণভাবে কোনো ব্যবসায়ে একাধিক সদস্য এবং মুনাফা বণ্টনের বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় মনে করা হয় । কিন্তু আইনগত বিচারে অংশীদারির অস্তিত্ব নির্ণয়ে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কই মুখ্য বলে বিবেচিত।

উল্লেখিত সংজ্ঞা এবং আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিলক্ষিত হয় যে, অংশীদারি সম্পর্ক সৃষ্টিতে চুক্তির আবশ্যকতা রয়েছে। যেসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অংশীদারি চুক্তি সম্পন্ন করা হয় তাহলো—
i. কোনো বিষয়ের ভুল বুঝাবুঝি নিরসন;
ii. অংশীদারিত্বের ভিত্তি ও রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে; 

iii. চুক্তিপত্র প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে;
iv. তৃতীয় পক্ষ হতে ঋণ বা কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য;
v. চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবসায় পরিচালনা করে;
vi. অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ;
vii. মূলধন আনয়ন ও তার ব্যবহার সুনিশ্চিত করার জন্য।

নিচের কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো—

১। হিন্দু যৌথ পারিবারিক ব্যবসায় (Hindu joint family business): কোনো হিন্দু পরিবারের সদস্যরা যদিও তাদের পরিবারের মোট আয় নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে থাকে কিন্তু শুধুমাত্র চুক্তি না থাকায় বর্তমানে একে অংশীদারি ব্যবসায় বলা যায় না । 

২।উত্তরাধিকার সম্পর্ক (Heriditary relationship): চলমান ব্যবসায়ের কোনো সদস্যের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বা সন্তানরা কারবারের মুনাফা ভোগ করলেও তারা ব্যবসায় অংশীদার নয়। অংশীদার হতে চাইলে তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদাভাবে অন্যান্য অংশীদারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে।

৩। পদমর্যাদা (Designation) : সামাজিক পদমর্যাদার জন্য কোনো কর্মচারী বা কর্মকর্তাকে মুনাফার কিছু অংশ প্রদান করা হলেও তাকে ব্যবসায়ের অংশীদার বলা যাবে না । কারণ শুধুমাত্র সামাজিক পদ- মর্যাদার জন্য মুনাফার অংশ ভোগ করছে কিন্তু চুক্তিতে আবদ্ধ না হওয়ার জন্য অংশীদার নয়। 

৪। সামাজিক অবস্থান (Social position) : কয়েকজন গায়িকার গানের অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত আয় নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলেও তাদের সংগঠনকে অংশীদারি ব্যবসায় বলা যায় না। কারণ তাদের মধ্যে ব্যবসায় বা মুনাফা অর্জন সংক্রান্ত কোনো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি।

৫ ৷ ঋণের মুনাফা প্রাপ্তি (Profit receive for status) : অংশীদারি ব্যবসায়ে ঋণ দিয়ে কোনো ব্যক্তি ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায় হতে মুনাফা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তার সাথে অংশীদারি চুক্তি না থাকায় তাকে অংশীদার হিসেবে গণ্য করা যাবে না। 

৬। পেশাদারি দলের মুনাফা বণ্টন (Profit distribution in professional group): পেশাদারি সাংস্কৃতিক দল মুনাফা অর্জনের পর তা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিলেও তাদের অংশীদার বলা যাবে না। কারণ তারা অংশীদারি চুক্তি সম্পন্ন করেনি ।

পরিশেষে বলা যায় যে, অংশীদারি ব্যবসায়ের অস্তিত্ব যাচাইয়ের প্রধান মাপকাঠি হচ্ছে অংশীদারদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি। মুলত চুক্তি লিখিত বা মৌখিক যেভাবেই হোক না কেন তা ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার দিক-নির্দেশক (Guide line) হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই বলা হয়, “চুক্তিই অংশীদারি কারবারের মূল ভিত্তি ।”

অংশীদারি চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু (Contents of Partnership Deed)

অংশীদারি চুক্তিপত্র অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালনার মূলমন্ত্র হিসেবে পরিচিত। অংশীদারগণ নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেরাই চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে থাকে। অংশীদারদের মধ্যে ভবিষ্যতে ঝগড়া-বিবাদ ও মামলা-মোকদ্দমা এড়াতে চুক্তিপত্রের শর্তাবলিই কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিে
অংশীদারি চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু উল্লেখ করা হলো— 

১. অংশীদারি ব্যবসায়ের নাম;
২. ব্যবসায়ের ঠিকানা:
৩. ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত এলাকা;
৪. ব্যবসায়ের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও আওতা;
৫. ব্যবসায়ের কার্যক্রম বিস্তৃতির বর্তমান ও সম্ভাব্য এলাকা;
৬. ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব;
৭. অংশীদারদের নাম, ঠিকানা ও পেশা;
৮. ব্যবসায়ের মোট মূলধনের পরিমাণ; 

৯. মূলধন আনয়ন ও সংগ্রহ পদ্ধতি;

১০. অংশীদারদের প্রকৃতি নির্ধারণ;
১১. অংশীদারদের প্রত্যেকের প্রদত্ত পুঁজির পরিমাণ ও তা পরিশোধ পদ্ধতি; 

১২. মূলধনের ওপর সুদ দেয়া হবে কিনা, হলে কি হারে;
১৩. অংশীদারগণ ব্যবসায় হতে কোনো অর্থ উত্তোলন করতে পারবে কিনা, পারলে কে কত বা কি হারে;
১৪. উত্তোলিত অর্থের ওপর সুদ ধরা হবে কিনা;
১৫. ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান বণ্টন পদ্ধতি ও হার;
১৬. ব্যবসায়ের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি;
১৭. ব্যবসায়ের হিসাব বহি রক্ষণ ও হিসাব নিরীক্ষা পদ্ধতি;
১৮. ব্যবসায়ের হিসাব বহি সংরক্ষণ ও পরিদর্শন সংক্রান্ত নিয়ম; 

১৯. যে ব্যাংকে হিসাব খোলা হবে তার নাম, ঠিকানা ও হিসাবের ধরন;
২০. ব্যাংকের হিসাব পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নাম পদবি ; 

২১. ব্যবসায়ের দলিল পত্রে দস্তখত প্রদানকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নাম পদবী :
২২. ব্যবসায়ের প্রয়োজনে কোনো অংশীদার ঋণ সরবরাহ করলে তার ওপর দেয় সুদের হার; 
২৩. ব্যবসায়ের প্রয়োজনে অন্যত্র হতে ঋণ সংগ্রহ পদ্ধতি;

২৪. অংশীদারগণের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা;
২৫. কোনো অংশীদারকে কোনো বেতন বা পারিতোষিক দেয়া হবে কিনা, হলে কী হারে; 

২৬. ব্যবসায়ের সুনাম মূল্যায়ন সম্পর্কিত বিধি-বিধান;
২৭. অংশীদারদের মধ্যে কোনো বিবাদ দেখা দিলে তা মীমাংসা পদ্ধতি;
২৮. অংশীদার অপ্রকৃতিস্থ বা দেউলিয়া হলে তার অংশ নিরূপণ, সংরক্ষণ ও পরিশোধ পদ্ধতি;
২৯. ব্যবসায় সম্প্রসারণের নিয়ম; 

৩০. নাবালক অংশীদার গ্রহণের নিয়ম;
৩১. নতুন অংশীদার গ্রহণ ও প্রয়োজনে বিদ্যমান কোনো অংশীদারকে বহিষ্কারের নিয়ম;
৩২. কোনো অংশীদারের মৃত্যু বা অবসরগ্রহণকালে ব্যবসায়ের দায়-সম্পত্তি নিরূপণ ও পাওনা পরিশোধ পদ্ধতি;
৩৩. ব্যবসায়ের আর্থিক বছরের শুরু ও শেষ সময়;
৩৪. ঋণ গ্রহণ ও প্রদানের নিয়মাবলি;
৩৫. অংশীদার কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের নিয়ম ও সুদের হার;
৩৬. ঋণ পরিশোধ ও আদায় পদ্ধতি;
৩৭. ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি;
৩৮. ব্যবসায়ের বিলোপকালে ব্যবসায়ের দায়-সম্পত্তি মূল্যায়ন ও বণ্টন প্রণালি

৩৯. চুক্তিপত্রের কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজনে নিয়ম পদ্ধতি;
৪০. চুক্তিপত্রের বাইরে কোনো বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে আমাদের দেশে তা ১৯৩২ সালে অংশীদারি আইন অনুযায়ী অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে মীমাংসা করা হয়। অবশ্য চুক্তিপত্রের কোনো ধারা বা ধারাসমূহ সকল সদস্যের মতানুযায়ী আইনের আওতায় থেকে সর্বদাই পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন বা রহিত করা যায় ।

পরিশেষে বলা যায় যে, চুক্তি মৌখিক হতে পারে, তবে সমস্যা দেখা দিলে মৌখিক চুক্তির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এজন্য চুক্তি লিখিত হওয়া সুবিধাজনক ।

Content added || updated By

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন পদ্ধতি

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বলতে সরকার নির্ধারিত নিবন্ধকের অফিসে ব্যবসায়ের নাম তালিকাভুক্ত করাকে বুঝায়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকার নিবন্ধকের কার্যালয়ে রক্ষিত বইতে অংশীদারি ব্যবসায়ের নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধকরণকে অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বলা হয় ।

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৫৮ ধারা অনুযায়ী কোনো অংশীদারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করতে হলে প্রথমত নিবন্ধকের অফিস হতে নির্ধারিত ফি জমাপূর্বক একটি ফর্ম/ আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করে চুক্তিপত্র ও গঠনতন্ত্রসহ নিবন্ধকের অফিসে জমা করতে হবে। সাধারণত আবেদনপত্রে নি লিখিত বিষয়সমূহ উল্লেখ করতে হয়—

১. অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের নাম;
২. প্রধান অফিসের ঠিকানা:
৩. অন্য কোথাও ব্যবসায়ের শাখা অফিস থাকলে তার ঠিকানা;
৪. ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য ও আওতা;
৫. ব্যবসায়ের মেয়াদ (যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হয়);
৬. প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তারিখ;
৭. প্রত্যেক অংশীদারের নাম, ঠিকানা, পেশা
৮. অংশীদার হিসেবে যোগদানের তারিখ ইত্যাদি ।

আবেদনপত্রটি প্রত্যেক অংশীদার কর্তৃক বা তার উপযুক্ত / আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। নিবন্ধক আবেদনপত্র ও চুক্তিপত্রটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে ব্যবসায়টি তালিকাভুক্ত করবেন। চুক্তিপত্র কিংবা আবেদনপত্রের কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোগ ও বিয়োজন করতে হলে নিবন্ধকের অনুমতি নিতে হবে এবং তা সম্বন্ধে তাকে অবহিত করতে হবে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন কি বাধ্যতামূলক (Is Registration of a Partnership Business Compulsory)

নিবন্ধন অংশীদারি ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলেও বাঞ্চনীয় বটে। কারণ অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধিত হলে এর আইনগত ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনায় বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করে। নিবন্ধন অংশীদারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

অংশীদার ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলেও বাঞ্ছনীয় বটে। কারণ অংশীদারি ব্যবসায়ে নিবন্ধিত হলে পরবর্তীকালে অংশীদারগণের মধ্যস্থিত সম্ভাব্য কলহ অথবা তৃতীয় পক্ষের সাথে দেনা- পাওনা নিষ্পত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সহায়ক হয়। নিবন্ধন করলে ব্যবসায়ের চুক্তিপত্রটি আইনসম্মত দলিলরূপে স্বীকৃতি লাভ করে। বস্তুত: নিবন্ধন অংশীদারি ব্যবসায়ের অস্তিত্ব প্রকাশ করে। তাছাড়া নিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় কতকগুলো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে ।

অংশীদারি আইনের ৬৯ (১) ধারা মতে, অংশীদারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত না হলে, বা নিবন্ধন বহিতে সংশ্লিষ্ট অংশীদারের নাম লিখিত না থাকলে কোনো অংশীদার অপর অংশীদার বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি হতে উদ্ভূত অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করতে পারবে না ।

পরিশেষে বলা যায় যে, অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন আইনত বাধ্যতামূলক নয়। তবে অংশীদারগণ ভবিষ্যৎ সুযোগ-সুবিধার জন্যে নিবন্ধন করে নিতে পারে। কারণ সংগঠন নিবন্ধন করা বা না করা অংশীদারদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে একথা সত্য যে, নিবন্ধন করা হলে কতিপয় আইনগত সুবিধা পাওয়া যায়। তাই এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করাই উত্তম।

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন না করার পরিণাম (Consequences of Non-Registration of Partnership Business)

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনে ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে নিবন্ধিত অংশীদারি ফার্ম ও অংশীদারকে বেশ কিছু সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাই অনিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় ও এর সদস্যগণ নিবন্ধিত ব্যবসায়ের তুলনায় কিছুটা অসুবিধাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় ।

১। পাওনা আদায়ের সমস্যা (Problem in collecting credit): অ-নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ১০০ টাকার বেশি পাওনা আদায়ের জন্য মামলা করতে পারে না। [৬৯(৪) ধারা]

২। তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলায় সমস্যা (Problem in submit case against third party): অ-নিবন্ধিত অংশীদারি কারবার তার কোনো অধিকার আদায়ের জন্য তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না। কিন্তু তৃতীয় পক্ষ তার কোনো অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অনিবন্ধিত অংশীদারি কারবারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।

৩। চুক্তিজনিত অধিকার আদায়ের সমস্যা (Problem in Established right in contract): অনিবন্ধিত অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে চুক্তিজনিত কোনো অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কোন অংশীদার অন্য কোনো অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না । [৬৯(১) ধারা]

৪। স্বার্থরক্ষা (Protect interest) : স্বার্থ আদায়ের জন্য কোনো অংশীদার অপর কোনো অংশীদার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না।

৫। পারস্পরিক মামলা দায়ের-এ সমস্যা (Problem in case file against each other): অনিবন্ধিত অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারগণ পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত মেনে চলার জন্য আদালতে মামলা করতে পারে না। 

তবে উপরিউক্ত অসুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও অনিবন্ধিত অংশীদারগণের নিম্নোক্ত অধিকারগুলো বলবৎ থাকে—

i. নিজ পাওনা বুঝে পাওয়ার অধিকার: বিলোপ সাধনকৃত ব্যবসায় হতে অংশীদারগণের পাওনা বুঝে নেয়ার অধিকার আছে।
ii. বিলোপসাধন ও হিসাব সংক্রান্ত অধিকার: অনিবন্ধিত অংশীদারি সংগঠনের অংশীদরগণ ব্যবসায় বিলোপ সাধন ও হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা করতে পারে।
iii.প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি উদ্ধারের অধিকারঃ অনিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠনের অংশীদারগণ হিসাব-নিকাশ ও সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা করতে পারে । 

iv. চুক্তিজনিত অধিকার: কোনো অংশীদার চুক্তি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে ।\

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুসারে নিবন্ধিত অংশিদারি ব্যবসায় যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

ক. অংশীদারগণ পাওনা আদায়ের জন্য তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে;
খ. অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এক অংশীদার অন্য অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না;
গ. এরূপ ব্যবসায়ে তৃতীয় পক্ষকে চুক্তি পালনে বাধ্য করার জন্য মামলা করতে পারবেন; ঘ. তৃতীয় পক্ষ দাবি আদায়ের জন্য কোনো অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করার অধিকার আছে;
ঙ. প্রত্যেক অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান হিসাবের পর অংশীদারগণের নিজেদের আয়কর প্রদান করতে হয়, ফলে ঝামেলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়;
চ. প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হলে আইনগত মর্যাদা পায়। ফলে এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট মর্যাদা পেয়ে থাকে ।

পরিশেষে বলা যায় যে, অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠন নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক না হলেও ভবিষ্যতে ভুল বুঝাবুঝি নিরসনের জন্যে এবং অংশীদারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এরূপ ব্যবসায় সংগঠনের নিবন্ধন করা বাঞ্ছনীয় হবে।

Content added By

অংশীদারের প্রকারভেদ

ব্যবসায় ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠন দেখি। তেমনি অবস্থা, ভূমিকা, কর্তব্য, দায়- দায়িত্ব, ক্ষমতা প্রভৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন অংশীদার দেখি।

চিত্র : অংশীদারের প্রকারভেদ

১. সাধারণ বা সক্রিয় অংশীদার (Active partner): যে ব্যক্তি চুক্তির বলে অংশীদার হয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত থাকে তাকে সক্রিয় অংশীদার বলে। ঐ ব্যক্তিকে অন্যান্য অংশীদারগণের প্রতিনিধি বলা হয়ে থাকে। এরূপ অংশীদারের দায়িত্ব হলো—

ক. ব্যবসায়ে প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করা; 

খ. দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা;
গ. ব্যবসায় পরিচালনায় সৃষ্ট দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ বহন করা ইত্যাদি ।

২. নিষ্ক্রিয় বা ঘুমন্ত অংশীদার (Sleeping or Inactive partner): যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান হতে লাভ ও ক্ষতির অংশ গ্রহণ করে, অথচ নিজে ব্যবসায় পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে না, তাকে নিষ্ক্রিয় অংশীদার বলে । নিষ্ক্রিয় অংশীদারকে কারবার হতে অবসর গ্রহণের জন্য বিজ্ঞপ্তি (Public notice) দেবার কোনো বাধ্যবাধ্যকতা নেই। বিজ্ঞপ্তি না দিলেও অবসর গ্রহণের পরবর্তী সময়ে সম্পাদিত কার্যের জন্য সে দায়বদ্ধ হবে না ।

এরূপ অংশীদারের বৈশিষ্ট্য হলো—

ক. ব্যবসায়ে মূলধন সরবরাহ করে;
খ. ব্যবসায় হতে মুনাফা গ্রহণ করে;
গ. লোকসান ও দায় বহন করে;
ঘ. ব্যবসায় পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে;
ঙ. তারা অন্য অংশীদারের উপর নির্ভর করে;
চ. অন্য অংশীদারের উপর আস্থা রেখে ব্যবসায় পরিচালনায় নিষ্ক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ইত্যাদি । 

৩. নামমাত্র অংশীদার (Nominal partner): এরূপ অংশীদারের অংশীদারি ব্যবসায়ে কোনো স্বার্থ থাকে না। কেবলমাত্র নিজের সুনাম অংশীদার হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া হয়। কিন্তু বাহিরের পাওনাদারগণের নিকট ঋণের জন্য তিনি দায়ী থাকে। এরা ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করে না, পরিচালনায়ও অংশ নেয় না, তবে চুক্তি অনুযায়ী লাভের অংশ অথবা নির্দিষ্ট বেতন বা অর্থ নেয়। নামমাত্র অংশীদারের বৈশিষ্ট্য হলো—
ক. এরূপ অংশীদার ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করে না; 

খ. এ অংশীদারের সুনাম ও যশ ব্যবসায়ে ব্যবহৃত হয়;
গ. কেউ সরল বিশ্বাসে ঐ অংশীদারের উপস্থিতির কারণে ব্যবসায়ে ঋণদান করলে তার জন্য নামমাত্র অংশীদার দায়বদ্ধ হন ইত্যাদি ।

৪. আপাতঃদৃষ্টিতে অংশীদার (Quasi-partner): কোনো অংশীদার কারবার হতে অবসর গ্রহণের পর তাঁর প্রদত্ত মূলধন তুলে না নিয়ে ঋণ হিসেবে ব্যবসায় রেখে দিলে তাঁকে আপাতঃদৃষ্টিতে অংশীদার বলে । মূলধনের উপর তিনি । সুদ পেয়ে থাকেন। কার্যত এরুপ ব্যক্তি ব্যবসায়ের পাওনাদার; অংশীদার নয়। তবে কোনো সক্রিয় অংশীদারগণ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে ব্যবসায়ে থেকে চলে গেলে তার দ্বারা তৃতীয় পক্ষের সৃষ্ট দায় তাকেই বহন করতে হবে ।

৫. নাবালক অংশীদার (Minor admitted as a partner): অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি (অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচে) অংশীদারি কারবারে অংশগ্রহণ করলে তাকে নাবালক অংশীদার বলে। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৩০(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, সকল অংশীদারগণের অনুমোদনক্রমে কোনো বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানে নাবালককে অংশীদারি সুযোগ-সুবিধাগুলো ভোগ করতে দেয়া হয়। কিন্তু সে প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়-দায়িত্ব বহন করে না বলে অংশীদাররূপে স্বীকৃতি পায় না। 

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী নাবালক কোন ব্যবসায়ের অংশীদার না হতে পারলেও সে অন্যান্য অংশীদারের সম্মতিক্রমে ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ কওে মুনাফা ভোগ করতে পারে। কিন্তু কোন প্রকারেই তাকে ফার্মের দায়-দায়িত্বের জন্য দায়ী করা যাবে না। কেবল ফার্মে দেয় তার মূলধনের অংশ পরিমাণ দায়ের জন্যই তাকে দায়ী করা যায়, অতিরিক্ত কিছুর জন্য দায়ী করা যায় না। এমনকি তার ব্যক্তিগত সম্পত্তিও এ দায় হতে মুক্ত। কিন্তু সে যখন সাবালক হবে তখনই সে ফার্মেও সবকিছুর জন্য দায়ী হবে। অবশ্য সাবালক হওয়ার ৬ মাসের মধেই তাকে চুক্তিপত্রে দস্তখত দিতে হবে। এমনকি তখন নাবালক অবস্থায় যে দিন হতে সে ফার্মের অংশীদাররূপে গণ্য হয়েছিল, সে সময়কার দায় এবং কার্যকলাপের জন্য তাকে দায়ী করা যাবে। নাবালক অংশীদারকে সীমাবদ্ধ অংশীদার বলে ডাকা হয় ।

৬. আচরণে অনুমিত অংশীদার (Partner by holding out): যে ব্যক্তি প্রকৃত অংশীদার না হয়েও তার কথাবার্তা, আচরণ দ্বারা নিজেকে ব্যবসায়ের অংশীদার বলে পরিচয় দেন তাকে আচরণে অনুমিত অংশীদার বলে। যদি কেউ এতে প্রভাবিত হয়ে ব্যবসায়কে ঋণ দেয় বা চুক্তি করে তবে ঐ দায় আচরণে অনুমিত অংশীদারকে নিতে হবে ।

সংজ্ঞার আলোকে বলতে পারি আচরণে অনুমিত অংশীদার হলো -

ক. আচরণের মাধ্যমে পরিচয়দানকারি অংশীদার;
খ. এ অংশীদার ব্যবসায় পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে না;
গ. ব্যবসায়ে মূলধন সরবরাহ করে না;
ঘ. ব্যবসায় হতে মুনাফাও গ্রহণ করে না;
ঙ. কিন্তু আচরণ দ্বারা প্রভাবিত তৃতীয় পক্ষের দায়ের জন্য আচরণে অনুমিত অংশীদার দায়বদ্ধ হন; 

চ. এরূপ অংশীদারের ভোটাধিকার থাকে না ইত্যাদি ।

৭. কর্মী অংশীদার (Working partner): যে অংশীদার ব্যবসায়ে কোনো মূলধন বিনিয়োগ করে না শুধুমাত্র নিজস্ব শ্রম ও দক্ষতা সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রাখে তাকে কর্মী অংশীদার বলে। চুক্তি অনুযায়ী এরা অন্যান্য অংশীদারের ন্যায় ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি অংশগ্রহণ করে এবং অসীম দায় বহনে বাধ্য থাকে। অবশ্য ব্যবসায় পরিচালনার জন্য এদেরকে নির্দিষ্ট হারে বেতন বা লাভের অংশ দেয়া হতে পারে।

৮. সীমিত বা সীমাবদ্ধ অংশীদার (Limited partner): চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায়ের কোনো অংশীদারের দায় সীমাবদ্ধ হলে বা আইনগতভাবে সকল অংশীদারের সম্মতিক্রমে কোনো নাবালককে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করা হলে সেক্ষেত্রে অনুরূপ অংশীদারকে সীমিত অংশীদার বলে। এদের দায় সাধারণত ব্যবসায়ে নিয়োজিত উক্ত অংশীদারের মূলধন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হয়। আইন অনুযায়ী এরূপ অংশীদার ব্যবসায় পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। কোনো সাবালক যোগ্য ব্যক্তিও চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এরূপ অংশীদার হতে পারে। কোনো অংশীদারি ব্যবসায়ে এক বা একধিক সীমিত অংশীদার থাকলেও তাকে সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায় (limited partnership) বলে।

৯. প্রতিবন্ধ অংশীদার (Patner by estoppel): যদি ব্যবসায়ের অংশীদারগণ কোনো ব্যক্তিকে ব্যবসায়ের অংশীদার হিসাবে পরিচয় দেয় এবং উক্ত ব্যক্তি তা জেনেও মৌনতা অবলম্বন করে তবে তাকে প্রতিবন্ধ অংশীদার বলে। এরূপ প্রচারণার ফলে সৃষ্ট দায়ের জন্য উক্ত ব্যক্তি তৃতীয় পক্ষের নিকট দায়বদ্ধ হয় । প্রতিষ্ঠান নিজের স্বার্থে কোন ব্যক্তি বা তৃতীয়পক্ষকে এধরনের প্রতিবন্ধ অংশীদার হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। এধরনের কাজের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধ অংশীদারকে মাসিক হারে সম্মানী বা অন্যকোন সুবিধা দিতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, অংশীদারি ব্যবসায়ের অংশীদার হতে হলে কোনো ব্যক্তির অবশ্যই চুক্তি সম্পাদনের যোগ্যতা থাকতে হবে। অবশ্য নাবালক অন্য অংশীদারদের সম্মতিক্রমে সীমিত অংশীদার হতে পারে। তবে পাগল, দেউলিয়া সরকারি কর্মচারী, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিদেশি শত্রু আইন অনুযায়ী অংশীদার হতে পারে না। কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংঘ অংশীদার হওয়ার যোগ্যতা রাখে না ।

Content added By

অংশীদারদের যোগ্যতা

দেশের প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোনো নাগরিক অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য হতে পারে। তবে পাগল, নাবালক, দেউলিয়া প্রভৃতি ব্যক্তি চুক্তি সম্পাদনের অনুপযুক্ত বিধায় অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য হতে পারে না। চুক্তি অংশীদারি ব্যবসায়ের ভিত্তি। আমাদের চুক্তি আইনের ১১ ধারা অনুসারে নাবালক (১৮ বৎসরের কম বয়স্ক) চুক্তি সম্পাদনে অক্ষম ।

Content added By

অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন

অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন বা পরিসমাপ্তি বলতে সকল অংশীদারগণের মধ্যে অংশীদারি সম্পর্কের অবসানকে বুঝায় এবং তার পরিণতিস্বরূপ ব্যবসায়ের বিলোপ ঘটে থাকে। অংশীদারি সম্পর্ক বিলুপ্তি হলেই ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যাবে এমন নাও হতে পারে। কারণ অপর অংশীদারগণ ব্যবসায় বজায় রেখে ব্যবসায় চালাতে পারে। সেক্ষেত্রে একে ব্যবসায়ের পুনঃগঠন বলে ।

অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধনের সাথে যে বিষয়গুলো জড়িত—

ক. অংশীদারদের চুক্তিজনিত সম্পর্কের অবসান ঘটে; 

খ. প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকান্ডের বিলুপ্তি;
গ. প্রতিষ্ঠানের সমুদয় সম্পদ ও দায়-দেনার মূল্যায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিশোধ করা ।

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসায়ের বিলোপসাধনে প্রতিষ্ঠান ও অংশীদারিত্বের- উভয়েরই বিলোপসাধন হয়। কিন্তু অংশীদারির বিলোপ ঘটলে ব্যবসায়ের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি (Methods of Dissolution of Partnership Business)

অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন বলতে অংশীদারদের মধ্যে ব্যবসায়ের সকল সম্পর্কের সম্পূর্ণ অবসানকে বুঝায়। নিচে বর্ণিত যেকোনো পদ্ধতিতে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ ঘটে—

চিত্র: অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন পদ্ধতি ।

১। সকলে একমত হয়ে বিলোপ সাধন (Dissolution by mutual agreement): অংশীদারগণ একমত হয়ে কারবার বিলোপসাধনের সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো সময় বা সকলের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির শর্তানুসারে নির্দিষ্ট সময় শেষে কারবারের বিলুপ্তি ঘটানো যায় (ধারা ৪০)।

২। বিজ্ঞপ্তি দ্বারা বিলোপসাধন (Dissolution by notice): ঐচ্ছিক অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অংশীদারি কারবারের বিলোপসাধন ঘটে থাকে। অর্থাৎ যেকোনো একজন অংশীদারি স্বেচ্ছায় বিজ্ঞপ্তি প্রদানের দ্বারা এ জাতীয় কারবার বিলোপ করতে পারে। কারবার বিলোপ সাধনের যে তারিখ উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে সেই তারিখ থেকে কারবারের বিলোপ সাধন কার্যকর হয়ে থাকে। যদি তারিখের উল্লেখ না থাকে তবে যে তারিখে অংশীদারগণ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবহিত হন সে তারিখ থেকেই কারবারের বিলুপ্তি ঘটেছে ধরে নেয়া হয় । [ধারা ৪৩ (১) ও (২)]

৩। বিশেষ কোনো ঘটনার জন্য বিলোপ সাধন (Dissolution on the happening of some contingencies): ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪২ ধারা অনুসারে নিলিখিত বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অংশীদারি কারবারের বিলুপ্তি ঘটে থাকে—
i. অংশীদারগণ একমত হয়ে (By consensus of partners ): সকল অংশীদার স্বেচ্ছায় একমত হয়ে অংশীদারি কারবার গুটিয়ে ফেলতে পারে। 

ii. নির্দিষ্ট সময় সমাপনান্তে (After the end of fixed time) : কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অংশীদারি কারবারের চুক্তি হয়ে থাকলে উক্ত সময় উত্তীর্ণ হবার সাথে সাথে কারবার প্রতিষ্ঠানটির বিলোপ সাধন ঘটে ।
iii. অংশীদার উন্মাদ বা পাগল হলে (If a partner becomes lunatic) : কোনো অংশীদারের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটলে কারবারটি ভেঙ্গে যেতে পারে ।
iv. অংশীদারের মৃত্যুর কারণে (On the death of partner): যেকোনো অংশীদারের মৃত্যুর কারণে এ জাতীয় কারবার ভেঙ্গে যেতে পারে ।
v. উদ্দেশ্য অর্জনের পর (After the achievement of the objective): কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কারবার স্থাপিত হলে ঐ উদ্দেশ্য হাসিলের পর কারবারটি বিলুপ্তির প্রশ্ন উঠে।
vi. কোনো অংশীদার অবসর গ্রহণ করলে (On the retirement of a partner): কারবারের যেকোনো অংশীদার যদি অবসর গ্রহণের নিমিত্তে আবেদন পেশ করে তবে আংশীদারি কারবারের বিলোপ সাধিত হয় ।
vii. আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে (If a partner is declared insolvent by the court): যদি কোনো অংশীদার বিশেষ কোনো কারণে আদালত মারফত দেউলিয়া ঘোষিত হয় তাহলে উক্ত কারবারের বিলুপ্তি ঘটে।

৪। বাধ্যতামূলক বিলোপ সাধন (Compulsory dissolution ) : নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অংশীদারি কারবারের বাধ্যতামূলক অবসায়ন হয়ে থাকে— 

i. দেউলিয়াত্ব (Insolvency): সকল অংশীদার বা একজন ব্যতীত সকল অংশীদার আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে অংশীদারি কারবারের অবসান হবে।
ii. আইনের পরিপন্থী হলে (Illegality): অংশীদারি কারবার পরিচালনায় যদি কোনো অবৈধ ঘটনা ঘটে যায় এবং তাতে প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ আইন বিরোধী বলে আখ্যায়িত হয় তাহলে কারবারের বিলোপ সাধন ঘটবে। (৪১ ধারা)।

৫। আদালতের নির্দেশ অনুসারে বিলোপ সাধন (Dissolution by the court )

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪৪ ধারা মোতাবেক কোনো অংশীদার এক বা তদুর্ধ অংশীদারের বিরুদ্ধে কোনো মোকাদ্দমা দায়ের করলে আদালত নিরে যেকোনো অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কারবার বিলোপ সাধনের নির্দেশ দিতে পারে—
i. কোনো অংশীদার উন্মাদ বা পাগল হলে;
ii.কোনো অংশীদার ইচ্ছাকৃতভাবে অংশীদারি কারবারের চুক্তি ক্রমাগত ভঙ্গ করলে;
iii. কোনো অংশীদার দেউলিয়া বলে প্রমাণিত হলে; 

iv. কোনো অংশীদার তার অপরাধের জন্য দন্ড বা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে;
v. কোনো অংশীদার তৃতীয় পক্ষের নিকট বে-আইনীভাবে তার আংশিক বা সম্পূর্ণ স্বত্ব হস্তান্তর করে থাকলে;
vi. আদালত যদি এ মর্মে নিশ্চিত হয়ে থাকে যে, ক্রমাগতভাবে কারবারের শুধুই লোকসান হচ্ছে;
vii. এছাড়া যেকোনো কারণে আদালত যদি মনে করে যে, কারবার প্রতিষ্ঠানটির বিলোপ সাধনই হচ্ছে যথার্থ হবে; তবে অংশীদারি কারবারের বিলোপ সাধন ঘটবে। (ধারা-৪২ )

Content added By

বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায়ের অবস্থান

বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে পশ্চাৎপদ একটি দেশ। বড় ধরনের শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য এখানে এখনও তেমন গড়ে ওঠেনি। বড় বড় শহরে বা তার আশপাশে কিছু বড় ধরনের ব্যবসায়-কোম্পানি সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠলেও গ্রাম-গঞ্জে, হাট-বাজারে এমন কি শহরের কেন্দ্রস্থলে একমালিকানা ব্যবসায়ের সংখ্যাই সর্বাধিক। অংশীদারি ব্যবসায়ের সংখ্যা সে বিচারে নেহায়েত নগণ্য: যা ৫% এর বেশি নয়। অথচ অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশের সর্বত্রই মাঝারি ধরনের ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল ।

বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায় ব্যাপকতা লাভ করতে না পারার পিছনে যে সকল কারণ বিদ্যমান তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১. ব্যবসায়িক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাব (Lack of business knowledge and experience): আমাদের দেশে যারা নতুন ব্যবসায়ে নামে তারা এ সম্পর্কে কার্যত তেমন কোনো জ্ঞান নিয়ে আসে না । যারা ব্যবসায়ে লিপ্ত তাদেরও অধিকাংশেরই এ বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ ক্ষুদ্র একমালিকানা ব্যবসায় গঠন করে পরিচালনায় যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অংশীদারি ব্যবসায় গঠনে অনুরূপ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না ।

২. পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব (Lack of reciprocal trust and faith): আমাদের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাবও প্রকট। অথচ অংশীদারি ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অংশীদারদের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। অন্যদের ওপর আস্থা না থাকার কারণে অনেকেই এরূপ ব্যবসায় পছন্দ করে না ।

৩. সততার অভাব (Lack of honesty ): আমাদের দেশের অনেকের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনে সততার মারাত্মক অভাবও লক্ষণীয়। কথাবার্তায় আমরা যতটা সৎ কার্যক্ষেত্রে ততটা নয়। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, অংশীদারি ব্যবসায় যে চালায় পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ের সকল সম্পত্তিকে সে নিজের ভাবে এবং অন্যদের ঠকানোর হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয় ।

৪. মূলধনের সমস্যা (Problem of capital): আমাদের দেশে যারা অংশীদার হিসেবে এরূপ ব্যবসায়ে যোগদান করে তাদের প্রত্যেকেরই আর্থিক সামর্থ অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। ফলে ব্যবসায়ে প্রয়োজনীয় মূলধন যোগাড় করা যায় না। অংশীদারদের নানান মত এবং সৎ ও সামর্থবান বিনিয়োগকারীর অভাবেও নতুন অংশীদার গ্রহণ করে মূলধনের সংস্থান করাও অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয় ।

৫. আইনগত সহায়তার অভাব (Lack of legal assistance): আমাদের দেশে অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা ও নিয়ন্ত্রণও কাম্যমানের নয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে এরূপ ব্যবসায় গঠন করা হয়। যার ফলে পরবর্তী সময়ে নানান সমস্যা দেখা দেয়।

৬. প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে শিথিল নিয়ম-কানুন ( Loose rules and regulation in case of private company): আমাদের দেশে কোম্পানি আইনে এর গঠন কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও তা এখনও তেমন যথেষ্ট নয়। কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে ক্ষেত্রবিশেষে সুবিধা লাভের সুযোগ থাকায় অনেকেই অংশীদারি ব্যবসায় গড়তে উৎসাহিত হয় না।

উপরিউক্ত সমস্যাদি ছাড়াও অংশীদারি ব্যবসায়ের যেসব সাধারণ অসুবিধা; যেমন-অংশীদারদের অসীম দায়, স্বাধীন সত্তার অভাব, মালিকানা হস্তান্তরে অসুবিধা, জনআস্থার অভাব, পরিচালনাগত জটিলতা ইত্যাদি সমস্যাও এখানে রয়েছে।

Content added By
Promotion